চট্টগ্রামে ‘ইয়ুথ কনজ্যুমারস রাইটস এক্টিভিষ্ট ডায়ালগ’ অনুষ্ঠিত

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: ভোক্তা-অধিকার সুরক্ষা কার্যক্রমে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ানো ও প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার জরুরি দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনসহ যেকোনো সংকটে তরুণরা জাতিকে দিক নির্দেশনা প্রদান করে সংকট সমাধানে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। কিন্তু বর্তমানে তরুণরা রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি ও ইন্টারনেটভিত্তিক গেমসহ নানা নেশায় আসক্ত হয়ে পৃথিবীর যাবতীয় কর্মকাণ্ড থেকে অনেক দূরে সরে আসছে। আবার দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় একজন ছাত্র/ছাত্রীকে শিক্ষার্থী হিসেবে নয়, গড়ে তোলা হচ্ছে পরীক্ষার্থী হিসেবে। সে কারণেই অভিভাবকদের কাছে পরীক্ষায় পাশই মুখ্য। শিক্ষিত হয়ে প্রকৃত মানুষ হলো কি না সেটা গৌণ।

অন্যদিকে, ব্যবসা অনুষদ বা মাকেটিংসহ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দুই হাজার ৫০০ টাকায় ব্যবসা শুরু করে দুই হাজার ৫০০ কোটির মালিকে পরিণত হবার মতো সাফল্যগুলো পড়ানো হয়। কিছু পত্রপত্রিকা ও মিডিয়াগুলো এ ধরনের সাফল্যের কাহিনীগুলো প্রচার করছেন। যেনতেন ভাবে ব্যবসায় লাভ করাটাই এখন সাফল্যের চাবিকাঠি। সে কারণেই একজন ছাত্র/ছাত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পার না করতেই কিভাবেই হাজার কোটি টাকার মালিক হতে পারে সে চিন্তায় মগ্ন হন। আবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরকার দলীয় অনুগতদের উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে প্রকৃত শিক্ষকদের অবমূল্যানের কারণে এ সমস্ত উপাচার্যরা নীতিভ্রষ্ট হয়ে যে সমস্ত অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন, তা পুরো শিক্ষক সমাজের জন্য কলংক হয়ে যাচ্ছে।

সরকারের অনুগত ভিসিদের অনিয়মগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাদেরকে পুনর্বাসনের মতো কর্মকাণ্ডের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীরা নীতি নৈতিকতাহীন কর্মকাণ্ড ও দুর্নীতির মতো বিষয়গুলোকে অপরিহার্য অঙ্গ বলেই শিক্ষা লাভ করছেন। ফলে একজন তরুণ ছাত্র/ছাত্রী কোনো ভাবেই সত্যিকারের মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা, সহনশীল ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হবার চেয়ে অপকর্মের হোতা হিসেবেই গড়ে উঠছে।

শনিবার চট্টগ্রাম নগরীর শিল্পকলা একাডেমীর সেমিনার হলে ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইয়ুথ কনজ্যুমারস রাইটস এক্টিভিষ্ট ডায়ালগ’ এ বক্তারা এসব মন্তব্য করেন।

বক্তারা আরও বলেন, আজকে যারা ছাত্র ও যুবক, আগামিতে তারাই পরিবার, সমাজ ও রাস্ট্রের গুরুর্ত্বপূর্ন দায়িত্ব নিবে। কিন্তু তারা যদি সমাজে চলমান অনিয়ম, ভোগান্তি, প্রতারনা ও সমস্যাগুলি সম্পর্কে সম্যক অবহিত না হয়, তাহলে পেশাগত জীবনে অথবা ব্যক্তিগত জীবনে এই সমস্যাগুলি থেকে উত্তরণের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বেগ পেতে হবে। তাই দেশের তরুন জনগোষ্ঠিকে দেশ ও জাতিগঠনমুলক স্বেচ্ছাসেবী সমাজ পরিবর্তন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা জরুরি। তারই অংশ হিসাবে ভোক্তা অধিকার, খাদ্যে ভেজাল বিরোধী অভিযান মাদক ও ধুমপানের বিরোধী প্রচারনা কর্মকান্ডে তরুন জনগোষ্ঠিকে সম্পৃক্ত করতে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ক্যাব যুব গ্রুপ গঠনের তৎপরতা বাড়ানো দরকার।

দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে সবকটি আন্দোলনে তরুন সমাজ নেতৃত্ব প্রদান করলেও ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে তরুনদেরকে ব্যবহার করে একটি গোষ্টি নিজেদের ফায়দা হাসিলের কারনে তরুন সমাজ বিভ্রান্ত হয়ে দেশে ও জাতি গঠনমুলক কাজ থেকে বিমুখ হয়ে আছে। সেকারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পাড়া মহল্লায় এখন আর সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চর্চা ও মানবতার কল্যাণে স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগগুলো বিকশিত হচ্ছে না। যার কারণে তরুণরা বিপথগামী হচ্ছে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জঘন্যতম ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। অন্যদিকে কর্পোরেট সংস্কৃতির আগ্রাসনে পড়াশুনা শেষ না করতেই তরুণদের নানা লোভনীয় অফার দিয়ে খণ্ডকালীন চাকরি দেয়া হলেও পরক্ষণে তার জবনিকা ঘটে। এর সর্বশেষ পরিণতি হয় অকালে সম্ভাবনাময় অনেক জীবন নষ্ট হয়ে যায়।

ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি আবু হানিফ নোমানের সভাপতিত্বে ও ক্যাব যুব গ্রুপের সদস্য ইসমাইল হোসেন মহারাজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংলাপে সম্মানিত অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক, পরিবেশবিদ মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী, ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু।

মূল কর্মঅধিবেশেনে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাঈদ আহসান খালিদ, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় বিশ্বাস ও ডেইলি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডস চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সামসুদ্দিন ইলিয়াছ।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন নিলয় বর্মন, খাইরুল ইসলাম, রাসেল উদ্দীন, ইমদাদুল ইসলা, রাকিবুল ইসলাম, সিদরাতুল মুনতাহা, মিসকাত, আরাফাত হোসেন চৌধুরী, নাফিসুল ইসলাম, রাকিবুল আলম, ইমরান হোসেন প্রমুখ।